জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের (এনএসআই) একজন কর্মকর্তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে ১৫ বছরে জমা হয় ১২৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। একই সময়ে তুলে নেওয়া হয় ১২৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ব্যবসা দেখানো হলেও ব্যাংকিং লেনদেন করেছেন স্বামী।
ঢাকায় এই দম্পতির আছে একাধিক ফ্ল্যাট, দোকান ও জমি। ঢাকার বাইরে নাটোরে আছে বাড়ি ও জমি। কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিন দ্বীপেও জমি কেনা হয়েছে। সাভারের বিরুলিয়ায় আছে সাড়ে ছয়তলা বাণিজ্যিক ভবন।
এত সম্পদের মালিক এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক আকরাম হোসেন ও তাঁর স্ত্রী সুরাইয়া পারভীন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান চালিয়ে তাঁদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পেয়ে দুজনের নামে মামলা করেছে।
বর্তমানে এনএসআইয়ের প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত আকরাম হোসেনের নামে ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া তিনি দুদকে জমা দেওয়া সম্পদের বিবরণীতে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। আর সুরাইয়ার প্রায় ২১ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।
দুদকের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আকরাম হোসেন এনএসআইয়ের পরিচালকদের সহকারী হিসেবে কাজ করার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরির ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয় দুদক।
নাটোরের নওপাড়ার বাসিন্দা আকরাম ১৯৮৯ সালে নিম্নমান সহকারী হিসেবে এনএসআইয়ে যোগ দেন। আট বছর পর বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে মাঠ কর্মকর্তা (জুনিয়ার ফিল্ড অফিসার) হন। ২০১৬ সালে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পরিচালক হন। দুদক ২০২০ সালে আকরাম ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আকরাম ২০০২ সালে প্রথম নাটোরে ২৪ শতাংশ জমি কেনেন। এরপর বিভিন্ন সময় স্ত্রী ও নিজের নামে ঢাকার দক্ষিণখানে আড়াই শতাংশ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ২০ শতাংশসহ মোট প্রায় ২০৮ শতাংশ জমি কিনেছেন। সবচেয়ে বেশি জমি কিনেছেন ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে।
আকরাম অবৈধ সম্পদ বৈধ করতে তাঁর স্ত্রী সুরাইয়ার নামে ২০০৮ সালে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলেন। কিন্তু সেই ব্যবসার কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই বলে দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। মোট ২৫টি ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সুরাইয়ার ব্যবসার যে আকার, তাতে এত টাকা লেনদেন করা অস্বাভাবিক।
দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ঢাকায় সুরাইয়া পারভীনের মোট ২৫টি ব্যাংক হিসাবে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১২৬ কোটি ৩৩ লাখ ১৫ হাজার ১৪৪ টাকা জমা হয়।
-সামছুল আলম জাবেদ
রাজনৈতিক কর্মী ও ব্লগার
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপি