সাবেক আইজিপি বনাম সাবেক সেনাপ্রধান

আমাদের বিশ্লেষকরা একটা কমন ভুল করছেন। সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিষয় দুটোকে তারা একই সূত্রে বিশ্লেষণ করছেন। কিন্তু দুটো বিষয় ভিন্ন। জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর মার্কিন পদক্ষেপের পরপর বেনজির আহমেদের ওপর সরকারের পদক্ষেপ একটা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। সরকার হয়তো জেনেশুনে এই বিভ্রান্তি তৈরি করতে চেয়েছে। কিন্তু একটু ভাবলেই বোঝা যায়, দুটো একেবারে ভিন্ন ঘটনা।

বেনজির আহমেদের ওপর পদক্ষেপ শুরু হয়েছিল কালের কণ্ঠে রিপোর্ট প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এক্ষেত্রে সরকার খুবই দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। বিষয়টাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রথমে বসুন্ধরা গ্রুপ বনাম রংধনু প্লাস বেনজির গ্রুপের সংঘাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা গেছে। কিন্তু আসলে ঘটনা মোটেও তেমন ছিল না। এটা ছিল বেনজির আহমেদের বিরুদ্ধে সরকারের প্রথম পদক্ষেপ। বেনজির আহমেদ উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তা ছিলেন। তার রাজনৈতিক অভিলাষও আছে। কিন্তু তার সেই রাজনৈতিক অভিলাষ সম্ভবত গোপালগঞ্জে বাস্তবায়িত হওয়া কঠিন। কিন্তু গোপালগঞ্জেই তিনি নিজের ঘাঁটি তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। প্রাথমিকভাবে এটি তার সঙ্গে শাসকদলের বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করেছে, এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।

দ্বিতীয়ত, একটি ধারণা রাজনৈতিক মহলে প্রচলিত আছে যে বেনজির আহমেদ ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে সরকারকে প্রত্যাশিত মাত্রায় সহায়তা করেননি।
তৃতীয়ত, নিষেধাজ্ঞার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হারানো সম্পদ ফিরে পেতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহায়তামূলক অবস্থান নিতে পারেন এমন ধারণাও হয়তো সরকার পেয়েছিল। এসব কারণে বেনজির আহমেদের ওপর সরকার বিরক্ত থাকতে পারে। অন্যদিকে আজিজ আহমেদের বিষয়টির প্রেক্ষাপট একদম আলাদা। তবে তার ওপর মার্কিন পদক্ষেপের পর সরকারের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয় বিষয়টি সরকারের মোটামুটি সম্মতিতেই হয়েছে। সরকার এই পদক্ষেপে খুব বেশি খুশি না হলেও খুব বিরক্তও হয়নি। অর্থমন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট, বিষয়টি নিয়ে সরকার খুব বেশি আগাতে চায় না। বল তারা সেনাবাহিনীর কোর্টে ঠেলে দিয়েছে। তবে, সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, তারা এই পদক্ষেপে খুব বেশি অখুশি নয়।
সাবেক এই কর্মকর্তারা সরকারের জন্য একরকম লায়াবিলিটি হয়ে গেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে তারা যেমন নানা অপকর্ম করেছেন, নিজেদের স্বার্থেও তেমনি নানা অপকর্ম করেছেন। তবে নিজেদের স্বার্থে বোধহয় বেশি করেছেন। এই হিসাবটা সরকারকে আজ হোক কাল হোক করতেই হত। কেননা এনাদের সব অপকর্মের দায় সরকারের ওপর বর্তাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সরকার সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের মেসেজ দিতে চায়। দীর্ঘমেয়াদে শাসন ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার স্বার্থে এগুলো করার কোনো বিকল্প নেই। সরকারের বাইরে ছোট ছোট সরকার গড়ে উঠলে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এমনিতে পদস্থ কর্মকর্তারা ছোট ছোট সরকার হয়ে থাকেন। এগুলো সরকারকে সহ্য করে যেতে হয়।অবসরপ্রাপ্তরাও যদি ছোট ছোট সরকার গড়তে থাকেন তাহলে বিষয়টা আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না। ফলে একটা সিলিং এর মধ্য দিয়ে তৈরি হয়ে যাচ্ছে। সরকারি কর্মকর্তারা কতদূর পর্যন্ত যেতে পারবেন সেটা নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে। একদিক দিয়ে এটা খারাপ না। সম্ভবত বেনজির আহমেদ একটু বেশি এগিয়েছিলেন। আজিজ আহমেদ তেমন লোক নন বলেই মনে হয়েছে। আজিজ আহমেদের পরিবার শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের প্রতি অনুগত। ফলে তার ব্যাপারটা একদমই আলাদা। তবে, আজিজ আহমেদ, বেনজির আহমেদের মতো কৌশলগত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন পদক্ষেপ সরকারকে সুবিধা দিয়ে যাবে।
এতে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ অনেক বেশি থাকবে। সরকারি কর্মকর্তারাও আগে থেকেই হিসাব নিকাশ করতে পারবে।

-জুনেদুল মান্না
বিএনপি পন্থী রাজনীতিবিদ ও লেখক

Scroll to Top