শুনলে মনে হবে কোনো সিনেমার গল্প। কিন্তু না, তিনি একজন সত্যিকারের সফল নেত্রী – বেগম খালেদা জিয়া। আজ তার জন্মদিন।
১৯৮২ সালের তেসরা জানুয়ারি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে খালেদা জিয়া আত্মপ্রকাশ করেন। সেদিন তিনি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। একই বছর ৭ই নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে খালেদা জিয়া প্রথম বক্তব্য রাখেন।
উনিশশো বিরাশি সালের ২১শে জানুয়ারি বিএনপি’র চেয়ারম্যান নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। দলের মধ্যে তখন এনিয়ে বিভক্তি। দলের তরুণ অংশ চেয়েছিল খালেদা জিয়া দলীয় প্রধান হোন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে বিএনপি’র প্রধান হিসেবে দেখেতে আগ্রহী ছিল তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ।
বিএনপির চেয়ারম্যান হবার জন্য একইসাথে প্রার্থী হয়েছিলেন খালেদা জিয়া এবং রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার। এর ফলে এক বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিচারপতি সাত্তার দুবার বেগম খালেদা জিয়ার বাসায় যান। বেগম খালেদা জিয়া তাঁকে তরুণ নেতৃত্বের মনোভাবে কথা জানান। এসময় বিচারপতি সাত্তার বেগম খালেদা জিয়াকে দলের সহ-সভাপতির পদ এবং দেশের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানান। কিন্তু বেগম জিয়া ব্যক্তিগত কারণে তা গ্রহণ করেননি। অবশেষে বিচারপতি সাত্তারের সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর বেগম খালেদা জিয়া চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁর প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন।
উনিশশো বিরাশি সালের ২৪শে মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচএম এরশাদ এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। তখন রাজনীতিতে মি. সাত্তারের আর কোন মূল্য থাকেনি। তাঁর বার্ধক্য, অসুস্থতা এবং নিষ্ক্রিয়তার কারণে দল থেকে তিনি আড়ালে পড়ে যান।
মি. সাত্তার আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির চেয়ারম্যান থাকলেও দল পরিচালনায় খালেদা জিয়ার প্রভাব বাড়তে থাকে।
উনিশশো তিরাশি সালের মার্চ মাসে খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হন এবং এপ্রিল মাসের প্রথমে বিএনপির এক বর্ধিত সভায় তিনি ভাষণ দেন।
সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কয়েকমাস পরেই খালেদা জিয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। এ সময় এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেন তিনি। এরপর ১৯৮৪ সালের ১০ই মে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
মওদুদ আহমদ লিখেছেন, খালেদা জিয়া দলের চেয়ারম্যান হোন এটি সামরিক নেতারা, দুই গোয়েন্দা বিভাগ এবং মন্ত্রীসভার দুই গ্রুপ – কেউ চায়নি। প্রভুদের এবং নিজেদের স্বার্থরক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজ অনেকটা জোর করেই বিচারপতি সাত্তারকে দিয়ে মনোনয়নপত্রে সই করান। খালেদা জিয়া যদি তখন বিএনপির হাল না ধরতেন তাহলে বিএনপি নিঃসন্দেহে গভীর সংকটে পতিত হতো বলে মি. মাহফুজউল্লাহ মনে করেন।
উনিশশো আশির দশকে জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশজুড়ে খালেদা জিয়ার ব্যাপক পরিচিত গড়ে উঠে। জেনারেল এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে বিএনপি জয়লাভ করে। রাজনীতিতে আসার ১০ বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তাঁকে কয়েকবার আটক করা হলেও আন্দোলন থেকে সরে যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন।
খালেদা জিয়া তাঁর রাজনৈতিক জীবনে যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তার সবগুলোতেই জয়লাভ করেছেন।
-কাওসার আহমদ
রাজনৈতিক কর্মী – বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল