মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আমি প্রবাসী বাংলাদেসীসহ দেশবাসী সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। কামনা করি তাঁদের অব্যাহত সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ। আজকের এ দিনে আমি বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণ করছি। যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে যাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশের। আমি স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। পরাধীনতার হাত থেকে দেশের বিজয় অর্জনে যেসব মা-বোন সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন-আমি জানাই তাদের সশ্রদ্ধ সালাম।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে শুরু হওয়া স্বাধীনতাযুদ্ধ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধের পর এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। মহান বিজয় দিবস শৌর্যবির্য, অদম্য সাহস ও বীরত্বে এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। এদেশের দামাল ছেলেরা হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ছিনিয়ে এনেছিলো স্বাধীনতার সূর্য। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের জানান দেয়ার দিন আজ।
শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক বাংলাদশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়েই ১৯৭১-এ এদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে আমাদের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছে, জনগণের মৌলিক ও মানবিক অধিকার খর্ব হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই এদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষ ঐতিহাসিক লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধার করেছে।
একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত হলেও চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত আজো বিদ্যমান। আধিপত্যবাদী শক্তি আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে গ্রাস করে আমাদেরকে একটি পদানত জাতিতে পরিণত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত। ওই অপশক্তির এদেশীয় দোসররা নানাবিধ চক্রান্তজাল রচনা করে আমাদের বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বিপন্ন করে চলেছে।
৫ জানুয়ারী ২০১৪-তে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা নির্বাচন এবং ২০১৮ এর ভোটের আগের রাতে প্রহসনের একতরফা নির্বাচন করে জনমতকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জনদাবীকে উপেক্ষা করে একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে নানা কারসাজি করে যাচ্ছে বর্তমান অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানুষের মানাবিক মৌলিক অধিকার হরণ করে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে নিরুদ্দেশ করা হয়েছে।
বর্তমানে বিরোধী দল ও মতের ওপর নামিয়ে আনা হয়েছে পৈশাচিক জুলূম, নিপীড়ণ, নির্যাতন। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে সাজা দেয়ার এক নজীরবিহীন হিড়িক শুরু হয়েছে। ক্ষমতা জবরদখলকারীরা জনগণের ওপর নৃশংস আক্রমণ চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ শুরু করছে। বর্তমান পরিস্থিতি যেন ভয়ংকর নৈরাজ্যময়। যিনি জীবনের দীর্ঘ সময় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছেন সেই অবিসংবাদিত নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছে, তাঁর মৌলিক মানবাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং হাজার হাজার নেতাকর্মী এখন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের কারাগারে বন্দী।
বিজয় দিবসের চেতনা আমাদের উদ্বুদ্ধ করে গণতন্ত্রের বিজয় অর্জনের আন্দোলনে। ফ্যাসিবাদের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপদমুক্ত করা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে মহান বিজয় দিবসের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মহান বিজয় দিবসে আমি দেশবাসী এবং গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল ও শ্রেণী-পেশার সকল মানুষের প্রতি সেই আহবান জানাই। বিজয় দিবস উপলক্ষে আমি সকল কর্মসূচীর সাফল্য কামনা করছি।
আল্লাহ্ হাফেজ, বাংলাদশ জিন্দাবাদ।
-তারেক রহমান
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল