বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বিপ্লবের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে। তাকে বানালেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মানে মূলত তিনিই দেশ চালাবেন। দেশ ভালো চললেই হলো, কে চালাক তাতে আমার মাথাব্যাথা নাই। এর মধ্যে আবার মাস্টারমাইন্ড কোথা থেকে এলো।
এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড যদি কাউকে বানাতেই হয় তাহলে তিনি হবেন শহীদ আবু সাইদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যিনি ভিডিও করে ফেইসবুকে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। মূলত আবু সাইদ ক্যামেরার সামনে শহীদ হয়েছেন বলেই আন্দোলনটা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল।
এরপর মাস্টারমাইন্ড যদি কাউকে বলতে হয় তাহলে দুইজনের নাম আসবে। শুনে অনেকে অবাক হলেও এই দুইজনের একজন তারেক রহমান আরেকজন ডাক্তার শফিকুর রহমান। আপনি বিশ্বাস করেন বা নাইবা করেন প্রত্যেকটা বিএনপি এবং জামায়াত কর্মীদের উপর নির্দেশ ছিল কোনভাবেই ছাত্ররা যাতে একা না হয়। মানে পুলিশ যেহেতু অল্প ছাত্র দেখে গুলি করছে তাই কোথাও ছাত্ররা নামলে তাদের সাথে যেন মিশে যায়, দলীয় কোন শ্লোগান ভুলেও দেয়া যাবে না। ছাত্ররা মিছিল করে এগিয়ে যাবে, মাঝে থাকবে দলীয় কর্মী, পুলিশের সাথে এরা মোকাবেলা করবে।
এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাবির ছাত্ররা এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ঢাবিতে কি এত ছাত্র পড়ালেখা করে যত মানুষ তারা মিছিল মিটিং এ পেয়েছিল? নেতাদের নির্দেশ ছিল ঢাবির ছাত্ররা যাতে কোনভাবেই মনোবল না হারায়। তারা সমাবেশের ডাক দিলে যাতে কম হলেও ৫০ হাজার মানুষ জড়ো হয়।
লক্ষ্য করবেন, এই বিপ্লবে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল যাত্রাবাড়ী এলাকার লোকজনের। ১৮ জুলাই আর্মি নামানোর পরেও তাদেরকে সরাতে ৩ দিন লেগেছিল। পরে তারা যখন দেখে অন্য এলাকায় সবাই আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছে তখন তারা রাস্তা ছেড়েছে। কারা ছিল এই যাত্রাবাড়ীর আন্দোলনকারী জানেন? তাদের বড় অংশ ছিল মাদ্রাসা ছাত্র, বিএনপি ও জামায়াত কর্মী। মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে বারবার বলা হয়েছে তারা যেন টুপি আর পাঞ্জাবি না পড়ে। তারা গেঞ্জি ও ট্রাউজার পরে যাবে। তারা তাই করেছে। টংগীতে তামিরুল মিল্লাতের ছাত্ররা টি শার্ট প্যান্ট পরে উত্তরায় আন্দোলন করেছে। টংগীর বিএনপির কর্মীরা উত্তরা থানায় আগুণ লাগিয়ে দিয়ে আন্দোলনকে একটা পর্যায়ে নিয়ে এসেছিল। বাড্ডা থানা ঘেরাও করেছিল বিএনপি জামাতের কর্মীরা। বসিলা ব্রীজের ওপার থেকে কেরানীগঞ্জ থেকে বিএনপি জামাতের কর্মীরা এসে মূলত বসিলা ব্রীজ দখল করে রেখেছিল কারফিউ নামার পরেও ৩ দিন। বসিলা ঢাকা উদ্যানের ১০ হাজার ছাত্রের সাথে যোগ দিয়েছিল ৫০ হাজার বিএনপি জামাতের কর্মী। এসব হয়েছে ১৮ তারিখের আগে। তখনও আম জনতা মাঠে নামেনি। বিএনপি নেতারা কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলে পানি বিস্কুটের ব্যবস্থা করেছেন। তারা কেউই বিএনপির ব্যানারে যান নি। জামায়াতের লোকজন রাস্তায় ‘অভিভাবক’ পরিচিতি নিয়ে পানির বোতল হাতে দাড়িয়ে ছিল।
বিএনপির আদাবরের এক নেতা যেখানেই আন্দোলন হতো সেখানেই পিকাপে ভরে লাঠি নিয়ে যেতেন, ছাত্রদের মাঝে বিলি করতেন। কারণ হাতে লাঠি থাকলে কনফিডেন্স বাড়ে। মিরপুর ১০ এ কী হয়েছে তা তো জানেনই। শুধু ঢাকা সিটিতেই কম হলেও ২ লাখ মাদ্রাসা ছাত্র টি শার্ট প্যান্ট পরে লড়াই করেছিল। এদের মধ্যে সব তরিকার/মতের ছাত্র ছিল। কে জামায়াত কে চরমোনাই কেউ ভাবে নাই।
এক বিএনপি নেতা পাইকারি বাজারে গিয়ে কয়েক হাজার টুথপেষ্ট কিনেছিলেন শুধুমাত্র মিছিলে ফ্রী দেয়ার জন্য। টুথপেষ্ট চোখের আশেপাশে লাগালে টিয়ার গ্যাসের জ্বালা কম হয়।
অনেক আবাসিক মাদ্রাসা রান্না করা খাবার আর পানি বিতরণ করেছিল যাতে দুপুরে খাওয়ার জন্যেও আন্দোলনকারীরা যাতে রাস্তা না ছাড়ে। এই আন্দোলনে দেশ প্রেমিক পুলিশেরও অনেক সহযোগিতা ছিল।
আমার ধারনা এই বিপ্লবের পেছনে বিএনপি জামায়াত ১০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। আন্দোলনে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ভূমিকা অসাধারণ ছিল। হাসিনা ৫ আগস্টের পরে এমনিতেই টিকে থাকতে পারত না কারণ রেমিট্যান্স বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
যাহোক, হুট করে কাউকে মাস্টারমাইন্ড বানানোর পক্ষে আমি নই।
-জুনেদুল মান্না
মানবাধিকার কর্মী ও লেখক